Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

জেলা প্রশাসনের পটভূমি

চাঁদপুরের প্রশাসনিক ইতিহাস

১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজ উদ্দৌলার পরাজয়ের পর বাংলা-বিহারে ইংরেজদের রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৭৬৪ খ্রীষ্টাব্দে বক্সারের যুদ্ধে মীর কাসিম ও তার মিত্র বাহিনী ইংরেজদের নিকট চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়। বক্সারের যুদ্ধের পর লর্ড ক্লাইভ নবাব সিরাজউদ্দৌলা ও সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম ১৭৬৫ খ্রীষ্টাব্দে এলাহাবাদের সন্ধিচুক্তিতে আবদ্ধ হন। সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম ১৭৬৫ সালের ১২ আগষ্ট এক ফরমানে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীকে বাংলা বিহারের দেওয়ানী দান করেন। এই সময় ত্রিপুরা ও কুমিল্লা রাজ্য বাংলা সুবার অন্তর্ভূক্ত ছিল এবং মুর্শিদাবাদের নবাবের শাসনাধীন ছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী দেওয়ানী লাভের পর স্বাভাবিকভাবেই এই এলাকা কোম্পানীর রাজস্ব শাসনের অন্তর্ভূক্ত হয়। ১৭৭২ সালে কোম্পানী নায়েব দেওয়ানের পদ রহিত করে এবং রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব সরাসরি গ্রহণ করে। মুর্শিদাবাদের নবাবকে শাসন পরিচালনার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং কোম্পানী প্রত্যক্ষভাবে বাংলা বিহারের শাসনভার গ্রহণ করে।

ত্রিপুরা রাজ্যের জমিদারীর রাজস্ব আদায়ের জন্য ১৭৭৬ খ্রিষ্টাব্দে কুমিল্লায় একজন ইংরেজ রেসিডেন্ট নিয়োগ করা হয়। কুমিল্লার রেসিডেন্টকে চট্টগ্রাম কালেক্টরের অধীন করা হয়। তখন চাঁদপুর ছিল কুমিল্লা রেসিডেন্টের অধীনে। কুমিল্লায় প্রথম রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন মিঃ ডানকান কাম্পবেল, তারপর ১৭৭৮ সালে মিঃ লীক এবং ১৭৮৫ সালে মিঃ জন বুলার কুমিল্লার রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন।

ত্রিপুরা জেলার সৃষ্টিঃ ১৭৮৪ ও ১৭৮৭ খ্রীষ্টাব্দে পর পর দু‘বার গোমতি নদীর বাঁধ ভেঙ্গে তৎকালীন কুমিল্লা বন্যায় প্লাবিত হয়। বন্যার দরুন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয় এবং দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। স্থানীয় অধিবাসীরা দুর্দশাগ্রস্ত  হয়। বন্যা ও দুর্ভিক্ষ সম্পর্কে তদন্তের জন্য কোম্পানী  কর্তৃপক্ষ মিঃ প্যাটারসন নামক একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে কুমিল্লায় পাঠায়। তদন্তের পর মিঃ প্যাটারসন এই এলাকার মানুষের কাছাকাছিতে একটি প্রশাসনিক ইউনিট গঠনের লক্ষ্যে কুমিল্লার রেসিডেন্ট জন বুলারের অধীনস্থ এলাকা, গংগামক্ষস বলদাখাল, দাউদকান্দি ও ভুলুয়া পরগণাগুলি নিয়া একটি জেলা কালেক্টরেট গঠনের সুপারিশ করেন। বোর্ড অব রেভিনিউ এই সুপারিশ গ্রহণ করেন। মিঃ প্যাটারসনের সুপারিশের ভিত্তিতে ১৭৯০ সালে ত্রিপুরা জেলা গঠিত হয় এবং জন বুলার ইহার প্রথম কালেক্টর নিযুক্ত হন।

চাঁদপুর মহকুমার সৃষ্টিঃ কুমিল্লা শহরে এর সদর দপ্তর স্থাপিত হয়। ১৮২১ সালে ত্রিপুরা জেলার দক্ষিণাংশের একটি বিরাট এলাকা নিয়ে নোয়াখালী কালেক্টরেট সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে ১৮৭৮ সালের ১লা জুন ত্রিপুরা জেলার দক্ষিণাঞ্চলের থানাগুলির সমন্বয়ে চাঁদপুর মহকুমা সৃষ্টি হয়। মিঃ কে সি দাস গুপ্তা নামক একজন ভারতীয় সিভিল সার্ভেন্ট চাঁদপুরের প্রথম মহকুমা প্রশাসক নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে চাঁদপুরের মানচিত্রে বেশ কিছু রদবদল হয়। ১৯২৭ সালের ১৮ অক্টোবর চাঁদপুর থানা থেকে জেএল নম্বর ১২০, ১২৩, ১২৪ মৌজাকে তৎকালীন ফরিদপুর জেলার ভেদরগঞ্জ থানার সাথে সংযুক্ত করা হয়। ১৯২৯ সালের ২১ মার্চ গোসাইরহাট থানার জে এল নম্বর ৩৫০-৩৫৭ মৌজাকে চাঁদপুর থানার সংগে যুক্ত করা হয়। ১৯৩০ সালের ৫ জুলাই এবং ১৯৩১ সালের ১লা জুলাই রাজবাড়ী থানার জেএল নং- ৩৫৮-৩৬৪ মৌজাকে চাঁদপুর থানার সঙ্গে যুক্ত করা হয়।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মোট ৪৯ জন মহকুমা প্রশাসক চাঁদপুরের শাসন কার্য পরিচালনা করেন। এঁদের মধ্যে ১১ জন আইসি এস, একজন বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস অফিসার, ২১ জন সিএসপি অফিসার, ৬ জন ই, পি, সি, এস কর্মকর্তা ছিলেন। স্বাধীনতা পূর্ব সর্বশেষ মহাকুমা প্রশাসক ছিলেন জনাব মোহাম্মদ আলী মিয়া (ইপিসিএস অফিসার)। স্বাধীনতা উত্তর প্রথম মহাকুমা প্রশাসক ছিলেন জনাব আইয়ুব কাদরী এবং চাঁদপুরের সর্বশেষ মহকুমা প্রশাসক ছিলেন জনাব মোঃ আকতার হোসেন খাঁন।

চাঁদপুর জেলা সৃষ্টিঃ১৯৮৪ সালে  সরকার প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ ও জেলা পুনর্গঠন নীতির আওতায় চাঁদপুর মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করেন এবং ১৯৮৪ সালে ১লা ফেব্রুয়ারী জেলা হিসেবে চাঁদপুরের কার্যক্রম শুরু হয়। জনাব আলহাজ্ব জানিবুল হক চাঁদপুর জেলার প্রথম জেলা প্রশাসক নিযুক্ত হন। জেলা সৃষ্টির পর এ যাবৎ মোট ১৬ জন জেলা প্রশাসক চাঁদপুর জেলায় জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন।

কালেক্টরেট ভবনঃ জেলা সৃষ্টির পর স্বাভাবিক ভাবেই চাঁদপুর কালেক্টরেটের কার্যক্রম বেড়ে যায় এবং নতুন কালেক্টরেট ভবন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। চাঁদপুর শহরের ষোলঘর নামক স্থানে ২৮ নভেম্বর ১৯৯৯ তারিখে নতুন কালেক্টরেট ভবন উদ্বোধনের পর হতে চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের কার্যক্রম উক্ত কালেক্টরেট ভবন হতে পরিচালিত হয়ে আসছে। বর্তমান কালেক্টরেট ভবনে জেলা প্রশাসনের কার্যক্রম স্থানান্তরের পূর্ব পর্যন্ত চাঁদপুর জেলা এবং তৎপূর্বে মহকুমা প্রশাসকের কার্যক্রম চাঁদপুরের বর্তমান ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল এর স্থানটিতে অবস্থিত ভবন হতে পরিচালিত হতো। উক্ত ভবনের পাশে এখনো চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের বাসভবন তথা আবাসিক কার্যালয় অবস্থিত রয়েছে।